ব্রণ যৌবনের অবাঞ্ছিত সমস্যা। সুন্দর মুখশ্রীর উপর জাপটে বসে থাকে গােটার মতাে দৃষ্টিকটু যন্ত্রণা। আর তাই ব্রণ নিয়ে ছেলে কি মেয়ে কারােরই চিন্তার শেষ নেই।
কাদের হয়
তেরাে বছর বয়স থেকে উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত শতকরা নব্বই জনেরই এ রােগটি কম বেশি হয়ে থাকে। বিশ বছর বয়সের পর থেকে নিজে থেকেই এ রােগটি ভাল হয়ে যেতে থাকে। তবে এর ব্যতিক্রম যে হয় না তা নয়। কখনও কখনও বিশ থেকে তিরিশ বছর বয়সেও এটি দেখা দিতে পারে এবং অনেক বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
দেখতে কেমন
ব্রণের প্রকারভেদ অনেক। তবে সাধারণভাবে যে কয়েক ধরনের ব্রণ হয়ে থাকে তারই বর্ণনা এখানে দেখা হচ্ছে। এটি লােমের গােড়ায় হয়ে থাকে। ব্রণের মূল যে জিনিস, তার নাম কমেডাে (চাপ দিলে ভাতের দানার মতাে বের হয়)। তবে কখনও কখনও শুধু দানা আকারে, পুঁজ সহকারে, গহ্বরযুক্ত দানা বা বড় গােটার আকারে দেখা দিতে পারে।
শরীরে কোথায় কোথায় হয়
সাধারণত মুখেই (গাল, নাক, কপাল, থুতনি) বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয়। তাছাড়া ঘাড়, শরীরের উপরের অংশ, হাতের উপরের অংশ ইত্যাদি স্থানেও ব্রণ হয়ে থাকে।
কেন হয়
অনেক কারণের ভিতর বংশগত কারণ একটি অন্যতম কারণ। প্রােপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামক এক ধরনের জীবাণু স্বাভাবিকভাবেই লােমের গােড়াতে থাকে। এন্ড্রোজেন হরমােনের প্রভাবে সেবাম-এর নিঃসরণ (মাথা, মুখ ইত্যাদি জায়গায় তেলতেলে ভাব) বেড়ে যায় এবং লােমের গােড়াতে উপস্থিত জীবাণু সেবাম থেকে ফ্রী ফ্রাটি এসিড তৈরি করে। এসিডের কারণে লােমের গােড়াতে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং লােমের গােড়াতে কেরাটিন জমা হতে থাকে।
বিভিন্ন অবস্থায় ব্রণ
- ট্রপিক্যাল একনি-অতিরিক্ত গরম এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে পিঠে উরুতেব্রণ হয়ে থাকে।
- প্রিমিন্সটুয়াল এনি-কোন কোন মহিলার মাসিকের সপ্তহখানেক আগে ৫-১০টির মতাে ব্রণ মুখে দেখা দেয়।
- একনি কসমেটিকা-কোন কোন প্রসাধনী লাগাতার ব্যবহারে মুখে অল্প পরিমাণে ব্রণ হয়ে থাকে।
- একনি ডিটারজিকেনস্ -মুখে অতিরিক্তভাবে সাবান দিয়ে ধুলেও দৈনিক ১/২ বারের বেশি) ব্রণের পরিমাণ বেড়ে যায়।
- স্টেরয়েড এনি-স্টেরয়েড ওষুধ সেবনে হঠাৎ করে ব্রণ দেখা দেয়।
- মুখে ষ্টেরয়েড যেমন- বেটনােভেট, ডার্মোভেট জাতীয় ওষুধ একাধারে অনেকদিন ব্যবহারে ব্রণের পরিমাণ বেড়ে যায়।
চিকিৎসা
চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্রণের প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে। ব্রণের পরিমাণ যদি খুব বেশি হয় ও ইনফেকশন থাকে তবে টেট্রাসাইক্লিন বা ইরাইথ্রোমাইসিন খেতে হয়। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে বলে এসব ওষুধ একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের অধীনে খাওয়াই মঙ্গল। তবে সাধারণভাবে রেটিন-এ ক্রিম অথবা পেনক্সিল ২.৫% জেটি নিরাপদে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সূর্য ডােবার পর (সন্ধ্যার পর) শুধু গােটাগুলােতে ১/২ বার লাগাতে হয়। এটি লাগালে প্রথম প্রথম একটু চুলকানাে বা লালভাব হতে পারে। ২/১ দিন ব্যবহারের পর ঠিক হয়ে যায়। লালভাব বা এলার্জি যদি খুব বেশি হয় তবে ব্যবহার বন্ধ করে দেবেন।
ছােট ছােট সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান
মেয়েদের গোঁফের রেখা এবং ব্লিচিং
- অনেকেরই ঠোটের উপরিভাগে লােম ওঠে। ব্লিচিং করে কি এই লােম স্থায়ী ভাবে দূর করা যায় ? এই লােম দূর করার কোনাে স্থায়ী পদ্ধতি আছে কি ?
- ব্লিচিং করে ঠোটের ললাম কালাে থেকে হালকা সােনালী করা যায়। এটি সাময়িক। এই হালকা রংয়ের জন্যই সেটা ত্বকের রংয়ের সঙ্গে মিশে থাকে। ইলেকট্রোইপিলিয়েশন হচ্ছে লােম দূর করার স্থায়ী পদ্ধতি। চর্ম বিশেষজ্ঞরা সেটা করে
থাকেন।
মেয়েদের গোঁফের রেখা দূর করতে গ্রেডিং কি কাজে আসে ?
- মহিলাদের অপ্রয়ােজনীয় পশম বিশেষ করে গোঁফের রেখা দেখা দিলে সেগুলাে ইলেকট্রোইপিলিয়েশন পদ্ধতিতে তুলে ফেলার পর কি আবারও দেখা দেবে ?
- পুনরায় এ পশম গজাবেনা। এ জাতীয় পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে পশম নিমূল হয় । কিন্তু থ্রেডিং পদ্ধতিতে লােম তুলে ফেলার পরও সেটা আবার গজাবে। থ্রেডিং হয় বিউটি পার্লারে, এটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। আর ইপিলিয়েশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করেন কোন চর্ম বিশেষজ্ঞ। থ্রেডিং এবং ইলেকট্রোইপিলিয়েশনের মধ্যে অনেক তফাৎ।
মেয়েদের মুখের লােম দূর করতে আধুনিক পদ্ধতি
- অনেক মেয়ে মুখে পুরুষদের মতাে মােটা পশমের সমস্যায় ভােগেন। এর সমাধান কি এবং ঘরে বসে স্থায়ীভাবে এগুলাে দূর করার কোন ব্যবস্থা আছে কি?
- বাংলাদেশে মেয়েদের অপ্রয়ােজনীয় পশম স্থায়ীভাবে একমাত্র ইলেকট্রো-ইপিলিয়েশন। পদ্ধতিতেই নির্মূল করা হয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বে এখন লেজার ইপিলিয়েশন পদ্ধতিও চালু রয়েছে। তবে ঘরে বসে এ পদ্ধতি প্রয়ােগ করা সম্ভব নয়। এটি একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রতিবার ৩০-৪০টি পশম তােলা সম্ভব হয়, সময় লাগে প্রায় আধা ঘন্টার মতাে। সপ্তাহে বড় জোর ২ বার এটি করা সম্ভব হয়। তবে খরচ সাধ্যের মধ্যে।
ঘরে বসে স্থায়ীভাবে লােম নিমূল কি সম্ভব ?
- যে সব মেয়েদের ঠোটের উপরে, গলায় কিংবা মুখে অবাঞ্ছিত লােম রয়েছে তারা কি ঘরে বসে ইলেকট্রোইপিলিয়েশন পদ্ধতিতে নিজেরাই নিজেদের লােম স্থায়ীভাবে নির্মূল করতে পারেন ?
- এ ধরনের অবাঞ্ছিত লােম ঘরে বসে নিজে নিজে শত চেষ্টা করেও স্থায়ীভাবে দূর করা সম্ভব নয়। স্থায়ীভাবে লােম নির্মূলের জন্যে যে ইলেকট্রোইপিলিয়েশন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় সেই যন্ত্রপাতি কিনে নিজে তা করা সম্ভব নয়। এটি করার জন্যে যন্ত্রপাতি সহযােগে এ বিষয়ে চর্ম বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতা প্রসূত দক্ষতা প্রয়ােজন অর্থাৎ কাজটি করে থাকেন এ বিষয়ে দক্ষ চর্ম বিশেষজ্ঞ। কাজেই চর্ম বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
মেয়েদের মুখে অবাঞ্ছিত লােম
- অনেক মেয়ের মুখমন্ডলে কিংবা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অবাঞ্ছিত লােম গজিয়ে থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে হরমােনের কোনাে সমস্যা ধরা পড়েনা। এ অবস্থায় কী করণীয়?
- শরীরের অপ্রয়ােজনীয় লােমকে ইলেকট্রিক মেশিনের সাহায্যে স্থায়ীভাবে নির্মূল করা যায়। এ পদ্ধতিটির নাম ইলেকট্রোইপিলিয়েশন (Electro epilation)। লােম নাশক লােশন মেখেও লােম অস্থায়ীভাবে নির্মূল সম্ভব। কিন্তু এ ধরনের লােশনে এলার্জি দেখা দিতে পারে বিধায় ইলেকট্রোইপিলিয়েশনই সর্বোত্তম ব্যবস্থা। এ কাজটি চর্মরােগ বিশেষজ্ঞ করে থাকেন।
মুখে জন্মদাগ
- অনেকের মুখমন্ডলে জন্মদাগ থাকে। চিকিৎসা না করালে তা ধীরে ধীরে বড় হয়ে সমস্ত মুখ মন্ডলে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে কি ?
- এ জাতীয় কোনাে সম্ভাবনা থাকেনা। তবে সময়ের সাথে সাথে যেমন মুখমণ্ডল বড় হতে থাকে তেমনি জন্মদাগটিও আকারে একটু বড় হবে কিন্তু পুরাে মুখে তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই।
মুখে হলুদ ও লেবুর রস
- প্রতিদিন মুখে হলুদ এবং লেবুর রস মাখাতে কি ত্বক ফর্সা হয় ?
- গায়ের রং কি রকম হবে তা নির্ভর করে তুকে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতির উপর। যার শরীরে মেলানিন যত বেশি তার রং তত গাঢ়। শেতাঙ্গদের শরীরে মেলানিন কম থাকে। সুতরাং মুখে ও শরীরে কোনাে কিছু মেখে ফর্সা হওয়া যাবেনা। হলুদ বা লেবুর রস মাখায় সাথেও এর কোনাে সম্পর্ক নেই।
মুখের ত্বক শুষ্ক
- কারাে কারাে মুখের ত্বক ভীষণ শুষ্ক ও রুক্ষ হয়। কোন সাবান ব্যবহার করলে মুখের এই রুক্ষ ভাব কমবে ?
- শুষ্ক ত্বকে সাধারণ সাবান ব্যবহার না করাই ভালাে। যদি সাবান ব্যবহার করতেই হয় তবে oilatum soap কিংবা Dove soap অথবা যেকোনাে গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করা যেতে পরে। মুখ ধােয়া বা গােসলের পর গরমকালে ভিটামিন-ই এবং শীত কালে ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ ক্রীম ব্যবহার করা যেতে পারে। এতেও কাজ হলে তুক সুগন্ধিহীন ভ্যাসিলিন লাগানাে যেতে পারে ।