৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মৃত্যুবরণ করেন। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের এক অনন্য অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। ব্রিটিশ সিংহাসনে সবচেয়ে বেশি সময় অধিষ্ঠিত ছিলেন রানি। তার মৃত্যুর পর রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন তৃতীয় চার্লস।
পুরাে নাম | এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর |
ডাকনাম | লিলিবেট |
জন্ম | ২১ এপ্রিল ১৯২৬ |
জন্মস্থান | মেফেয়ার, লন্ডন |
মৃত্যুবরণ | ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ |
মৃত্যুস্থান | বালমােরাল প্রাসাদ, স্কটল্যান্ড |
পিতা | ষষ্ঠ জর্জ |
মাতা | এলিজাবেথ বােয়েস-লিওন |
স্বামী | প্রিন্স ফিলিপ ডিউক অব এডিনবরা (গ্রিসের রাজপুত্র) |
একমাত্র ছােট বােন | প্রিন্সেস মার্গারেট |
সন্তান | ৪ জন। তৃতীয় চার্লস, প্রিন্সেস অ্যান, যুবরাজ অ্যান্ড্র এবং যুবরাজ এডওয়ার্ড |
সিংহাসনে আরােহণ | ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ |
রাজ্যাভিষেক (মুকুট পরানাে হয়) | ২ জুন, ১৯৫৩ (২৭ বছর বয়সে) |
জানেন কি?
এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি রাজশাসক (৭০ বছর ২১৫ দিন) • তিনি ঢাকা সফর করেন : ২ বার > প্রথমবার ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ ও দ্বিতীয়বার ১৪-১৭ নভেম্বর ১৯৮৩ তার শাসনামলে ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে হ্যারল্ড উইলসন আলাদা সময়ে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কনজারভেটিভ পার্টির উইনস্টন চার্চিল। আর সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী (১৬তম) লিজ ট্রাস • রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঘটনাবহুল জীবনের নানা অধ্যায় গল্পের আকারে বারবার উঠে এসেছে পর্দায়। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে— The Story of Queen Elizabeth II (২০০২)। The Queen (২০০৬) The King’s Speech (২০১০)। The Crown (২০১৬)। The Royal House of Windsor (২০১৭) Prince Philip : An Extraordinary Life (২০২১)। Elizabeth : The Unseen Queen (২০২২)।
সিংহাসনে এলিজাবেথ
দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় তৃতীয় ছিলেন। এ তালিকায় প্রথম ছিলেন তার বড় চাচা প্রিন্স অব ওয়েলস অষ্টম এডওয়ার্ড আর দ্বিতীয় ছিলেন এলিজাবেথের পিতা ডিউক অব ইয়র্ক আলবার্ট ষষ্ঠ জর্জ। দ্বিতীয় এলিজাবেথের রানি হওয়াটা একবারে গল্পের মতাে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন
- প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা
- আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ
- রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংস্কারক মিখাইল গর্বাচেভ
- রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ : বর্ণাঢ্য এক জীবনের আখ্যান
- জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পথপরিক্রমা
- মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১-২২
- চীন-তাইওয়ান সংকট
- বানিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের ৮টি শহর
২০ জানুয়ারি ১৯৩৬ দাদা পঞ্চম জর্জের মৃত্যুর পর তার বড় চাচা অষ্টম এডওয়ার্ড ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেন। কিন্তু ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৬ তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। এর পেছনে ছিল প্রেমের সম্পর্ক। মার্কিন সমাজকর্মী ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করতে চাইলে তার সিংহাসনে থাকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কারণ, সিম্পসনের দুইবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সে কারণে যুক্তরাজ্যের তঙ্কালীন প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিরা এরূপ একজন নারীকে রাজবধূ হিসেবে গ্রহণ করার ঘাের বিরােধী ছিলেন।
সিম্পসনকে বিয়ে করার বিষয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের পাশাপাশি বিরােধী ছিল চার্চ অব ইংল্যান্ডও। রাজাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, রাজসিংহাসন না সিম্পসন—একটি বেছে নিতে হবে এডওয়ার্ডকে। তাই সিংহাসনে আরােহণের মাত্র ৩২৬ দিন পর তা ত্যাগ করেন অষ্টম এডওয়ার্ড। এর মাধ্যমে রানি এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যু হলে সিংহাসন চলে আসে এলিজাবেথের কাছে। বয়স তখন তার ২৬। ২ জুন ১৯৫৩ ব্রিটিশ সিংহাসনে অভিষেক হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের।
অপারেশন ইউনিকর্ন
ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কোড নাম ছিল লন্ডন ব্রিজ। ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত ১০ দিন যা যা ঘটবে, সবই ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ নামে একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি হয় ১৯৬০ সালে। তার মৃত্যু হলে রানির প্রাইভেট সেক্রেটারি লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন’ নামে একটি বার্তা পাঠাবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে। তবে লন্ডনের পরিবর্তে স্কটল্যান্ডে রানির মৃত্যু হওয়ায় ‘অপারেশন ইউনিকর্ন নামে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
স্কটল্যান্ডের জাতীয় পশু ইউনিকর্ন। রয়্যাল কোট অব আর্মসেও ব্রিটিশ সিংহের সঙ্গে থাকে এই ইউনিকর্ন। অপারেশন ইউনিকর্ন অনুসারে মৃত্যুর পর স্কটল্যান্ড থেকে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে রাখা হয় রানির দেহ। রানির প্রয়াণের দিনটিকে DDay বলে উল্লেখ করা হয় এবং পরবর্তী শােকের দিনগুলিকে D+১, D+২ বলে চিহ্নিত করা হয়।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ D+১০ বা মৃত্যুর দশম দিনের মাথায় রানির শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেমােরিয়াল চ্যাপেলে সমাধিস্থ করা হয় ব্রিটেনের সাত দশকের ম্রাজ্ঞীকে। আর সেই সঙ্গেই শেষ হয় অপারেশন ইউনিকর্ন। রানির মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেন তার ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস। চার্লস মারা গেলে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকতারও নাম ঠিক হয়ে আছে আর সেটি হলাে, ‘অপারেশন মেনাই ব্রিজ।
পুরাে নাম | চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ |
জন্ম | ১৪ নভেম্বর ১৯৪৮ |
জন্মস্থান | বাকিংহাম প্রাসাদ, লন্ডন |
সন্তান | ২ জন [প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি] |
দাম্পত্য সঙ্গী | প্রিন্সেস ডায়ানা (বিবাহ ১৯৮১, বিচ্ছেদ ১৯৯৬) ও ক্যামিলা, ডাচেস অব কর্নওয়াল (বিবাহ ২০০৫)। |
নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস
মা দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর প্রথাগতভাবেই তার উত্তরাধিকারী হন বড় সন্তান তৃতীয় চার্লস। যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের প্রধান। হিসেবে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বাকিংহাম প্যালেসে প্রথম পা রাখেন। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ রাজা হিসেবে তিনি প্রথম ভাষণ দেন। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘােষণা দেয় এক্সেশন কাউন্সিল।
রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে এ কাউন্সিল গঠন করা হয়। ঐতিহ্য অনুযায়ী, রাজা বা রানির মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ এক্সেশন কাউন্সিলের আয়ােজন করা হয়। কিন্তু রানির মৃত্যুর ঘােষণা দেরিতে আসায় সেই আয়োজন করার সময় হয়নি। ব্রিটিশ শপথ পড়তে হয় না। যদিও ১৮ শতকের গােড়ার দিক থেকে চালু হওয়া একটি প্রথা অনুসরণ করে নতুন রাজা কেবল অঙ্গীকার করবেন, যে তিনি চার্চ অব স্কটল্যান্ড সংরক্ষণ করেন। প্রথম চার্লস (রাজত্ব : ১৬২৫ – ১৬৪৯) দ্বিতীয় চার্লস (রাজত্ব : ১৬৬০ – ১৬৮৫) তৃতীয় চার্লস (রাজত্ব : ৮.৯.২০২২ – বর্তমান)
অভিষেক প্রক্রিয়া
রাজা হিসেবে অভিষেক হলাে চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী ধাপ, যখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরবেন। এটি অ্যাংলিকান ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা পরিচালনা করেন আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি। আনুষ্ঠানিকতার চূড়ান্ত পর্বে তিনি চার্লসের মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ড মুকুট স্থাপন করবেন। এটি খাঁটি স্বর্ণের তৈরি, যা ১৬৬১ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। টাওয়ার অব লন্ডনে যেসব মণিমাণিক্য রয়েছে, এটি তার মধ্যমণি। একমাত্র রাজা বা রানির অভিষেকের সময় এটি তারা পরেন। সরকার এই অনুষ্ঠানের খরচ সরকার বহন করে এবং সরকারই এর অতিথি তালিকা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেয়। গত ৯০০ বছর ধরে অভিষেক অনুষ্ঠান হয় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারার ছিলেন প্রথম রাজা, যার অভিষেক হয় সেখানে। আর চার্লসের অভিষেক হবে ৪০তম রাজা হিসেবে।
রাজা-রানির জানা-অজানা তথ্য
যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী, রাজা বা রানির যাতায়াতের জন্য কোনাে পাসপাের্ট লাগে না। কোনাে ড্রাইভিং লাইসেন্সেরও প্রয়ােজন পড়ে না। ব্রিটেনের রাজা বা রানির দুটি জন্মদিন পালিত হয়। একটি আসল জন্মদিন, আরেকটি আনুষ্ঠানিক। রাজা বা রানি কখনাে ভােট দেন না। নির্বাচনে দাঁড়ানাের অধিকারও নেই তাদের। দেশের প্রধান শাসক হিসেবে তাকে সর্বদা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষই থাকতে হয়। ব্রিটিশ শাসক শুধু ব্রিটেনের মানুষদের ওপরেই নয়, পশুপাখিদের ওপরও রাজত্ব করেন। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সমস্ত রাজহাঁসকেই রাজ পরিবারের অধিকার বলে মনে করা হয়। দ্বাদশ শতাব্দী থেকেই এ নিয়ম পালন করা হচ্ছে। প্রতি ১০ বছর অন্তর রাজ পরিবার একজন কবিকে নিয়ােগ করেন, যিনি শুধু রাজার জন্যই কবিতা লেখেন। ১৭ শতাব্দী থেকেই এ নিয়ম পালন করা হচ্ছে।
রাজপরিবারে ক্ষমতার পালাবদল
ব্রিটিশ রাজপরিবার সব সময়ই আলােচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বের সব মানুষের আগ্রহের বিষয় হিসেবেও বিবেচিত। কোনাে রাজা বা রানি যদি মারা যান, তাহলে তার সন্তানের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বড় তিনি ক্ষমতায় বসবেন। সে। হিসেবে, রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর তার মেয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন। এর আগে রাজা ষষ্ঠ জর্জ তার বাবা পঞ্চম জর্জের পর দেশটির রাজা নির্বাচিত হন। তারও আগে ব্রিটিশ সিংহাসনে ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জের মা রানি ভিক্টোরিয়া।
তখন বাবা-মায়ের ছেলে সন্তান না থাকায় রানি ভিক্টোরিয়া ও দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসার সুযােগ পান। কারণ রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, উত্তরসূরিদের মধ্যে যদি ছেলে-সন্তান থাকে এবং সে যদি বয়সে মেয়েদের চেয়ে ছােটও হয়, তারপরও তিনিই রাজ সিংহাসনে বসবেন। কিন্তু ২০১৫ সালে প্রিন্স উইলিয়ামের মেয়ে প্রিন্সেস শার্লোটের জন্মের পর এ আইনের পরিবর্তন আনা হয়। ফলে প্রিন্সেস শার্লোট তার ভাই প্রিন্স লুইসের আগে সিংহাসনে বসতে পারবেন।
পরবর্তী সিংহাসনের দাবিদার | ||
ব্রিটিশ রাজপরিবারের যা পরিসর তাতে সিংহাসনে উত্তরাধিকারের সঠিক সংখ্যা জানতে হলে রীতিমতাে হিসাবে বসতে হবে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে চার্লস সিংহাসনে আরােহণ করেন। পরবর্তী উত্তরাধিকার হিসেবে প্রথম সাতজনের পরিচয় তুলে ধরা হলাে- | ||
নাম | জন্মগ্রহণ | সম্পর্ক |
প্রিন্স উইলিয়াম | ২১ জুন ১৯৮২ | চার্লসের বড় সন্তান |
প্রিন্স জর্জ | ২২ জুলাই ২০১৩ | উইলিয়ামের বড় সন্তান |
প্রিন্সেস শার্লোটা | ২ মে ২০১৫ | উইলিয়ামের মেয়ে |
প্রিন্স লুইস | ২৩ এপ্রিল ২০১৮ | উইলিয়ামের ছােট সন্তান |
প্রিন্স হ্যারি | ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪ | চার্লসের ছােট সন্তান |
আর্চি | ৬ মে ২০১৯ | হ্যারির সন্তান |
লিলিবেট | ৪ জুন ২০২১ | হ্যারির মেয়ে |
কুইন কনসর্ট কী?
যুক্তফ্রাজ্যে রানি কে হবেন, তা ঠিক হয় উত্তরাধিকার সূত্রে। অর্থাৎরানি হবেন তিনিই, যিনি পূর্বসূরির কাছ থেকে উত্তরাধিকারবলে এ খেতাব পাবেন। তার মর্যাদা, কর্মকাণ্ড আর দায়িত্বগুলােও হবে একজন রাজার মতােই। অপরদিকে রাজাকে যিনি বিয়ে করবেন, তাকে বলা হবে কুইন কনসর্ট। যেটা বলা হচ্ছে ক্যামিলাকে। তিনি কখনােই রাজসিংহাসনে বসতে পারবেন না। কারণ, তৃতীয় চার্লসকে বিয়ের মধ্য দিয়ে। রাজপরিবারের সদস্য হন তিনি। কুইন কনসর্ট সরকারের কোনাে আনুষ্ঠানিক পদে থাকেন না। একজন কুইন কনসর্টের মূল দায়িত্ব হলাে রাজার পাশে থাকা এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাকে সমর্থন জোগানাে।
প্রিন্স অব ওয়েলস
প্রিন্স চার্লস নিয়ম অনুযায়ী ‘রাজাতৃতীয় চার্লস’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। সে হিসেবে রাজা চার্লসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ রাজা তৃতীয় চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস হিসেবে তার বড় ছেলে উইলিয়াম ও পুত্রবধূ কেট মিডলটনের নাম ঘােষণা করেন। এর আগে চার্লস ও তার প্রয়াত স্ত্রী ডায়ানার যথাক্রমে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস পদবি ছিল। প্রিন্স অব ওয়েলস পদটি রাজসিংহাসনের উত্তরসূরির জন্যই রাখা হয়। যিনি রাজা বা রানির অবর্তমানে সিংহাসনে আরােহণ করেন।
রাজা বা রানির দায়িত্ব
যুক্তরাজ্যে রাজা বা রানি হলেন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান। যদিও তার ক্ষমতা প্রতীকী ও আনুষ্ঠানিক। তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে সিংহাসনে আরােহণ করেন এবং আমৃত্যু স্বপদে বহাল থাকেন। যুক্তরাজ্যে আইন প্রণয়ন বা আইন পাস করার ক্ষমতা দেশটির পার্লামেন্টের হাতে। উল্লেখযােগ্য দায়িত্ব হলাে— দেশটির নির্বাচিত সরকার রানিকে দেশ পরিচালনার বিষয়ে তথ্য দিয়ে থাকে, যা লাল রঙের একটি চামড়ার বাক্সে করে তার কাছে। পাঠানাে হয়। যুক্তরাজ্যের সরকার নিয়ােগ দেন। দেশটির জাতীয় নির্বাচনে যে দল জয়লাভ করে, তার প্রধানকে বাকিংহাম প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানাে হয় এবং রানির সঙ্গে দেখা করার পর রানি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের আহবান জানান। জাতীয় নির্বাচনের আগে চলমান সরকার ভেঙে দেওয়ার ঘােষণাও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনিই দেন। তার ভাষণের মধ্য দিয়েই যুক্তরাজ্যে নতুন পার্লামেন্টের যাত্রা শুরু হয়। যেটি ‘স্টেট ওপেনিং সেরেমনি নামে পরিচিত। যুক্তরাজ্যে আইন প্রণয়ন বা আইন পাস করার ক্ষমতা দেশটির পার্লামেন্টের হাতে থাকলেও সেটি আইনে পরিণত হতে আনুষ্ঠানিকভাবে রানির অনুমতি নিতে হয়।
রানির মৃত্যুতে পরিবর্তন
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্রিটেনের মানুষের জীবনে আসছে বেশকিছু পরিবর্তন। জাতীয় সংগীত তাে বটেই, পরিবর্তন করতে হবে মুদ্রা, স্ট্যাম্প, পােস্টবক্স ও পাসপাের্টেও। তবে কেবল যুক্তরাজ্যেই নয়, আরও কিছু দেশের মুদ্রায়ও ছিল রানির আসন।
পতাকা > যুক্তরাজ্য জুড়ে থানার বাইরে উড়তে থাকা পতাকা থেকে রু করে নৌবাহিনীর কোনাে জাহাজে একজন জেনারেল অবস্থান করার সময় ব্যবহৃত পতাকা বদলাতে হবে। এসব পতাকায় আদ্যাক্ষর দিয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাম লেখা আছে।
ব্যাংক নােট ও মুদ্রা > রানি যখন ১৯৫২ সালে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন, তখন ব্যাংক নােটে কোনাে রাজা-রানির ছবি থাকত না। ১৯৬০ সালে প্রথম রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মুখমণ্ডলের ছবি এক পাউন্ডের ব্যাংক নােটে শােভা পায়। রানির মুখাবয়ব সংবলিত সাড়ে ৪০০ কোটি পাউন্ড স্টার্লিং নােট প্রচলিত রয়েছে বাজারে। রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকের পর তার নতুন পােট্রেট তােলা হবে। এরপর সেখান থেকেই নতুন নােট ও মুদ্রার ছবি নির্বাচন করা হবে।
জাতীয় সংগীত > ১৯৫২ সাল থেকে God Save the Queen শিরােনামে জাতীয় সংগীত গান ব্রিটিশরা। রানির মৃত্যুর পর এবার পরিবর্তন আসে দেশটির জাতীয় সংগীতেও। ১৭৪৫ সালে রাজা তৃতীয় জর্জের সম্মানে God Save the King শিরােনামে লেখা হয় এটি।
স্ট্যাম্প এবং পােস্টবক্স > ১৯৬৭ সাল থেকে রয়্যাল মেইলের জারি করা স্ট্যাম্পে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবি ব্যবহার করা হয়। এখন থেকে এটিতে রাজা তৃতীয় চার্লসের ছবি ব্যবহৃত হবে।
সংস্থার পােশাক » ব্রিটেনে সেনা ও পুলিশের পােশাকে রানির একধরনের বিশেষ কোড থাকত, এবার সেই পােশাক বদলে গিয়ে সেখানে রাজার কোড ব্যবহার করা হবে।
১৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান
১৯৩১ সালে ওয়েস্টমিনস্টার সংবিধির মাধ্যমে কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ব্রিটিশ রাজা বা রানিকে মেনে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা করা হয়। ১৯৪৯ সালে লন্ডন ঘােষণার মাধ্যমে সদস্যভুক্ত দেশের প্রধান হিসেবে ব্রিটিশ রাজা বা রানির প্রতি আনুগত্যের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর অনেক দেশ ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের আনুগত্য থেকে বের হয়ে আসে। তারপরও রাজা বা রানি যুক্তরাজ্য এবং একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকা ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। রানির মৃত্যুর পর রাজা তৃতীয় চার্লস যুক্তরাজ্যসহ কমনওয়েলথভুক্ত ১৫টি দেশে রাষ্ট্রপ্রধান হন। অন্য ১৪টি দেশ হলাে—অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুড়া, বাহামাস, বেলিজ, কানাডা, গ্রানাডা, জ্যামাইকা, পাপুয়া নিউগিনি, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রানাডাইন্স, নিউজিল্যান্ড, সলােমন দ্বীপপুঞ্জ এবং টুভ্যালু।
কমনওয়েলথের প্রধান
২৮ এপ্রিল ১৯৪৯ কমনওয়েলথের প্রধান পদটি সৃষ্টি করা হয়। এটি কমনওয়েলথের প্রতীকী নেতার পদ। কমনওয়েলথ জোটের প্রধান নির্বাচনে কোনাে সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রধানই এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। রাজা ষষ্ঠ জর্জ কমনওয়েলথের প্রথম প্রধান (নেতা) ছিলেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ ষষ্ঠ জর্জ মারা যাওয়ার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কমনওয়েলথ জোটেরও প্রধান হন। সর্বশেষ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ রাজা তৃতীয় চার্লস ৫৬টি স্বাধীন দেশের জোট কমনওয়েলথের নতুন প্রধান হন।