লাহোর প্রস্তাব
১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ মুসলিম লীগের এক বিশেষ অধিবেশনে ঐতিহাসিক লাহাের প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন বাংলার কৃতী সন্তান শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক। এ প্রস্তাবে ভারতের পূর্বাঞ্চলে ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের যেসব স্থানে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব অঞ্চলে মুসলমানদের জন্য স্বাধীন, স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঐ সমস্ত রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলাে হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম।
নব-গঠিত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সকল অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে। আঞ্চলিক স্বাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার এবং সার্বভৌমত্ব অর্জনই ছিল লাহাের প্রস্তাবের মূলকথা। এখানে উল্লেখ্য যে, লাহাের প্রস্তাবে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল। পরবর্তীকালে একাধিক রাষ্ট্রের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে একটি রাষ্ট্র পাকিস্তান স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল।
লাহাের প্রস্তাবের পূর্বে কবি ও দার্শনিক ড: মুহম্মদ ইকবাল প্রথম স্বতন্ত্র মুসলিম আবাসভূমির কথা বলেছিলেন। ১৯৩৩ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রহমত আলী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকার জন্য পাকিস্তান নামের উদ্ভাবন করেন।
১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেস মন্ত্রিসভার কার্যকলাপ ও মুসলিম লীগের প্রতি উপেক্ষা ও অসহযােগিতা মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করে তােলে এবং ১৯৩৯ সালে মি: জিন্নাহ তাঁর দ্বি-জাতি তত্ত্ব ঘােষণা করেন। এ পটভূমিতে মুসলিম লীগ লাহাের প্রস্তাব গ্রহণ করে। লাহাের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর মুসলিম লীগ আরাে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নেতৃবর্গ লাহাের প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করেন। তাঁরা মুসলমানদের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিকে অবাস্তব বলে আখ্যায়িত করেন।
ক্রিপস মিশন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যােগদান করলে জাপানি আক্রমণের বিরুদ্ধে এদেশবাসীর সাহায্য সহযােগিতা লাভ করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ১৯৪২ সালে এ উপমহাদেশে প্রেরণ করেন।
তিনি ভারতের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে যে কয়টি প্রস্তাব করেন, তা ক্রিপস প্রস্তাব নামে খ্যাত। ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ক্রিপস রিপাের্টে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং ভারতকে ডােমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
যুদ্ধের অবসান হলে এদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে এদেশের জন্য সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাবও রাখা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় যেকোনাে প্রদেশের বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারের প্রশ্নে কংগ্রেস বিরােধিতা করে। স্বাধীনতা প্রদানের কোনাে উল্লেখ না থাকায় মুসলিম লীগও ক্লিপস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।