সত্তরের সাধারণ নির্বাচন
১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর এবং ১৭ই ডিসেম্বর যথাক্রমে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত হয়।
আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণ
১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। আওয়ামী লীগ ছয় দফা ও ছাত্রদের এগার দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচি জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। পাকিস্তানি শাসকদের শােষণের হাত থেকে মুক্তিলাভের আশায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভােট দিয়েছিল।
নির্বাচনের তাৎপর্য
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বাঙালিদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন ছিল তাদের স্বাধিকার ও মুক্তিলাভের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। আওয়ামী লীগকে জনগণ দেশ শাসনের ভার প্রদান করে। আওয়ামী লীগই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীকরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয় প্রমাণ করে ছয়-দফার প্রতি ছিল জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন। এ নির্বাচনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল যে, আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এবং পিপলস পার্টি পূর্ব পাকিস্তান থেকে কোনাে আসন লাভ করেনি।
দুদলেরই ছিল আঞ্চলিক প্রাধান্য। এ নির্বাচন প্রমাণ করে যে, পুর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে আগ্রহী। ১৯৭০-এর নির্বাচনে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ব বাংলার জনগণের আস্থা শেষ হয়ে পড়ে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে।