এটা খুবই সত্যি কথা যে, চাইলেই সুন্দর হওয়া যায় না। সৌন্দর্য হচেছ প্রকৃতির অবদান! তবুও সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তােলা যায় সেজেগুজে থাকলে।
প্রাচীন যুগ থেকে ত্ৰীয়েরা সেজেগুজে থাকতে খুবই ভালবাসে। ও নিজেকে সাজিয়ে এক ধরনের আত্মত্তষ্টি অনুভব করে। সৌন্দর্য-প্রসাধন নতুন কিছু নয়। শুরু থেকেই মহিলারা এসব জিনিষ ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এটা সত্যি যে, প্রতি যুগে এর রূপ পাটে গেছে। যেমন ধরুন, প্রথমে কাজলের প্রচলন ছিল, বর্তমান যুগ হল আহলাইনারের!
সৌন্দর্যের বাস্তবিক অর্থ কি ? প্রায়ই এটাকে সেজেগুজে থাকাকেই বােঝায়, কিন্তু এটা সৌন্দর্যের বাস্তবিক অর্থ নয়। সৌন্দর্য শুধুমাত্র সাজগােজ না হয়ে সুহ, শৃঙ্গারযুক্ত, সুন্দর চালচলন, ব্যবহার কুশলতার সম্মিলিত রূপ! এইসব জিনিষগুলােকে হাসিল করে আপনিও এক সুন্দরী নারী হয়ে উঠতে পারেন। এইসব জিনিষগুলাের মধ্যে যে কোন একটা জিনিষের অভাব আপনাকে সম্পূর্ণ সুন্দর হয়ে উঠতে দেবে! এই পুস্তকে সংক্ষেপে সেই সব ব্যাপারগুলাের ওপর দৃষ্টিপাত করা হচেছ, যাদের সম্মিলিত রূপই সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তােলে।
স্বাস্থ্য : সুস্থ শরীরই হচ্ছে সুস্থ মস্তিস্কের নিবাসস্থল। সবার আগে নিজের শরীর এবং শরীরের অঙ্গুলাের সঠিক দেখাশােনা করতে শিখুন। নিয়মিত ব্যায়ামে মাংসপেশীগুলাে ক্রিয়াশীল হয়ে উঠে শরীরকে সুডৌল এবং সুগঠিত করে তােলে।
আহার : সহ শরীরের জন্য সত্তলিত আহার অত্যন্ত আবশ্যক। তাহলেই আপনার শরীরের সঠিক বিকাশ সম্ভব হবে। পরিছন্নতা ও অপরিছন্নতা সকল অসুখের মূল। তাসুহ শরীরকে কোনদিনও সুন্দর দেখায় না! প্রতিটি ঋতুতে আলাদা-আলাদাভাবে সৌন্দর্যরক্ষা করা উচিত। নিয়মিত রূপে স্নান করাটাও স্বাহ্যের পক্ষে অত্যন্ত আবশ্যক।
ক্লান্তি ও কাজ করতে-করতে শরীর আর মস্তিষ্ক অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন বিশ্রাম, ঘুম দ্বারা কান্তি দূর করে নেওয়া উচিত। প্রাত্যহিক জীবনে সব কাজ সুচারুরূপে হতে থাকলে আপনার মস্তিষ্কের ওপর কোনরকম চাপ পড়বে না আর আপনি সর্বদা তাজা এবং সুস্হ হয়ে থাকতে পারবেন।
মেক-আপ : মেক-আপ সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু বেঠিক উপায়ে করা মেক-আপ শরীরকে কুৎসিত করে তােলে। কিন্তু মেক-আপ করার আগে মেক-আপ প্রসাধনের সম্বন্ধে বিস্তৃত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এই বিষয়ে আপনি কোন সৌন্দর্য-বিশেষজ্ঞেরও পরামর্শ নিতে পারেন। যদি আপনার বাড়ীর কাছাকাছি কোন বিউটি পালার না থাকে, তাহলে প্রধান-সামগ্রীর সঙ্গে দেওয়া নির্দেশাবলী পড়ে তার ব্যবহার শুরু করুন। তা না হলে আপনার ক্ষতি হতে পারে।
প্রসাধনের বাছাহ রূপ অনুযায়ী করা উচিত। ফসা রংয়ের যুবতীদের হাল্কা শেডের পাউডার এবং স্বাভাবিক রং-এর লিপস্টিক ভাল লাগে। যদি চুল খয়েরী রং-এর হয়, তবে খয়েরী রং-এর পেন্সিল দিয়েই প্র রং করা উচিত!
চালচলন ও চালচলন অন্যকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করে, তাই এই ব্যাপারে আপনাকে সতর্কতা নিতে হবে। ভাবলেশহীন মুখ অন্যের ওপর কোন প্রভাবই ফেলেনা। আপনার হাসি, কথা বলা, কানা সব কিছুই যেন স্ত্রী-সুলভ হয়! এটহি আপনাকে শােভা দেবে।
পােশাক ও পােশাক দামী হােক বা সত্য, প্রশ্ন হল আপনি পোশাক নিজের বয়স, ঋতু, শারীরীক গঠন অনুযায়ী পরেছেন কি না? সুতরাং পােশাক পরার সময় এই ব্যাপারটা যেন ভুলে যাবেন না। এই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে পােশাক নিবাচন করলে আপনাকে সাদামাটা এবং সন্তা পোশাকেও সুন্দর দেখাবে। হাসি হাসি-হাসি মুখ অপরকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করে। মুখে মৃদুমৃদু হাসি আপনাকে দ্বিগুণ সুন্দরী বানিয়ে তােলে।
ব্যবহার কুশলতা : এটাও এক ধরনের সৌন্দর্য! আপনি কতই সুন্দরী হােন না কেন, কিন্তু আপনি যদি নিজের ব্যবহার দ্বারা অপরের মন জয় করতে না পারেন, তাহলে কেউহ আপনার প্রশংসা করবে না। অন্যের সুখ-দুঃখকে নিজের সুখ-দুঃখ মনে করে ওদের সাহায্য করাটা এক অত্যন্ত বড় গুন।
যদি আপনি মানসিক দিক থেকে সুস্থ না হন, তাহলে আপনার মুখ আকর্ষনহীন লাগবে। মানসিক সুস্থতা প্রধানতঃ দুটি কারণে হয়?- এক, শারীরীক দুর্বলতা এবং দুই, অপরিপক্ক মস্তিস্ক! যদি আপনি দুর্বল হন, তাহলে আপনার মুখে খিটখিটে ভাব স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সুহ ব্যক্তির মুখ সর্বদা কান্তিময় দেখায়-যেটা এক ধরনের সৌন্দর্যও বটে। নিজের শারীরীক দুর্বলতার চিকিৎসা তখুনি করান। এতে আপনার মুখের ভাঁজ আর টেনশন শেষ হয়ে পড়বে এবং আপনি তাজা হয়ে উঠবেন।
মানসিক পরিপক্কতার অর্থ হল, সময়, স্থান এবং ব্যক্তি দেখে শিষ্টতাপূর্বক ব্যবহার করা। নিজের চেয়ে বড় বা ছােটদের প্রতি সঠিক ব্যবহার এবং নিজের বয়স অনুযায়ী গম্ভীরতার সঙ্গে নিজের মানসিক পরিপক্কতার পরিচয় দেওয়া। ফ্যাশন এবং সৌন্দর্য ও যুগ বদলানাের সঙ্গে-সঙ্গে ফ্যাশনও গিরগিটির মতন রং-রূপ বদলায়। ফ্যাশন আর যুগের প্রভাবে পড়ে সৌন্দর্যও নিজের মূল ব্যাপারটাকে সর্বদা একই রকম রাখতে পারেনা।
আজ থেকে কয়েক বছর আগেও পােশাকের যে ফ্যাশন ছিল, আজ তা নেই। প্রথমে চাপা সালােয়ারের খুব প্রচলন ছিল, এখন ঢিলেঢালা। আসলে আমরা বলতে চহি যে, বদলাতে থাকা ফ্যাশনকে নিশ্চয়ই নিজের জীবনে গ্রহণ করুন, কিন্তু নিজের আয়, হান এবং সময় দেখে।
অন্ধের মত ফ্যাশনের পেছনে ছোটা উচিত নয়। ফ্যাশন করতে গিয়ে আপনি যদি নিত্যনতুন পোশাক বানিয়ে পুরােটা ফেলে দিতে থাকেন, তাহলে সেটা একদিন আপনার বাজেটের বহিরে চলে যাবে। তাহ, বাজেট দেখে কিছু নতুন ফ্যাশনের পোশাক তৈরী করে নিতে পারেন।
যদি নীভলেস ব্লাউজের ফ্যাশন চলতে থাকে, তাহলে আপনি আপনার পুরােন হাতাওয়ালা মউজের হাত কেটে ফেলে স্লীভলেস ব্লাউজ পরার শখ পূরণ করতে পারেন। আর যদি পরে কোনদিন আবার হাতাওয়ালা ব্লাউজের চল হয়ে পড়ে, তাহলে আপনি নিজের স্লীভলেস ব্লাউজের সঙ্গে প্রিন্টেড কাপড়ের হাতা জুড়ে, সেহ কাপড় দিয়ে শাড়ীর আচল বানিয়ে নিজেকে ফ্যাশনেবল করে তুলতে পারেন।
ফ্যাশন করতে গিয়ে নারীত্বের সীমা কোনদিনও লঙ্ঘন করতে যাবেন । নন প্রদর্শন অপরের চোখ আপনার ইজ্জত কমিয়ে দেবে। সুতরাং, এমন পােশাক নিবাচন করুন, যাতে আপনার গরিমা বেড়ে ওঠে। ফ্যাশনের সঙ্গে পায়ে-পা মিলিয়ে চলাটা দোষের কিছুই নয়, কিন্তু সেই ফ্যাশনেবল পোশাক পরে আপনাকে কেমন দেখাচেছ, সেটা কি দেখেছেন ?
যদি আপনার ভারী শরীরে বেলবটম, ম্যাক্সি, প্যটি ভাল না মানায়, তাহলে শুধুমাত্র ফ্যাশনেবল হতে গিয়ে এই পােশাক পরে নিজেকে তাপরের কাছে হাস্যাপদ করে তুলবেন না!
সুতরাং, উচিত হল নতুন এবং পুরােন যুগের ভাল জিনিষগুলােকে গ্রহণ করে সর্বদা মাঝামাঝি রাস্তা নেওয়া। সব যুগেরই কিছু ভাল জিনিষ থাকে, সুতরাং সেই সব গুণগুলােকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করে আমরা নিজেদের আরও বেশী সুন্দরী করে তুলতে পারি।
সারাংশ হল যে, শারীরীক, মানসিক স্বাস্থ্য আর সৌন্দর্যের সঙ্গে প্রগতিশীল হলেহ আপনি সত্যিকারের সর্বগুণসম্পন নারী হতে পারবেন।
Leave a Comment