পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয়যন্ত্র পশ্চিম পাকিস্তানে থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক উন্নতি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের পাট দিয়ে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হত, তা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পায়ন হয়। সে অনুপাতে পূর্ব পাকিস্তানে শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।
নদীতে বাঁধ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হত, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে কোনাে নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। সিম্বর মরু অঞ্চলে পানিসেচের ব্যবস্থা করে শস্য উৎপাদন করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কোনাে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৪৯-৫০ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ৫১ ডলার আর পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ৪৬ ডলার।
পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী ১৯৫০-১৯৫৪-৫৫ সালে মােট উন্নয়ন বরাদ্দের শতকরা আশি ভাগই ব্যয় করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানে, আর মাত্র শতকরা বিশ ভাগ ব্যয় করেছিল পূর্ব পাকিস্তানে। পাকিস্তানের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ছিল যথাক্রমে শতকরা ২৬ ভাগ, ৩২ ভাগ এবং ৩৬ ভাগ। ১৯৪৮-৪৯ থেকে ১৯৬৮-৬৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ পাচার হত গড়ে প্রতিবছর দশ শতাংশ। এভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
সাংস্কৃতিক অবস্থা
কোনাে জাতির রাজনৈতিক চেতনা এবং জাতীয়তাবােধ সমূলে ধ্বংস করতে হলে সর্বাগ্রে সে জাতির ভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী একই উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে। শাসকগােষ্ঠীর প্রাধান্য, প্রতিপত্তি স্থায়ী করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ক্ষেত্রে শােষণের সাথে সাথে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও শশাষণ শুরু করেছিল।