বানিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের ৮টি শহর নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো। আপনারা যারা বিভিন্ন শহর সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য লেখাটি সহায়ক হবে।
বানিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের ৮টি শহর
হংকং
চীনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং। হংকং নামের অর্থ ‘সুবাসিত বন্দর’। পার্ল নদীর বদ্বীপের পূর্বভাগে অবস্থিত এই অঞ্চল বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ-বাণিজ্যকেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দর। ১৮৪২ সালে প্রথম আফিম যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা এই বন্দরের দখল নেয়। এরপর হংকংয়ের বাণিজ্যিক প্রসার ঘটতে থাকে। হংকংকে ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশরা আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়। ১৯৯৭ সালে বন্দরটি চীনের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। ব্যাংকিং, বিনিয়ােগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হংকংয়ের অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
সাংহাই
চীন এবং পুরাে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর সাংহাই। বাণিজ্যিকভাবে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই শহর বহু শতাব্দী ধরেই চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, নৌপরিবহন ও বাণিজ্যকেন্দ্র। প্রথম আফিম যুদ্ধে চীনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের জয়লাভের পর যে পাঁচটি চীনা বন্দরকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করতে বাধ্য করা হয়, তার মধ্যে সাংহাই ছিল একটি। গত শতাব্দীর ৩০ দশকে সাংহাই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আবির্ভূত হয়। সাংহাই বন্দর বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর।
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুর ক্ষুদ্র আয়তনের একটি নগররাষ্ট্র। দেশটি শুধু এশিয়া নয়; বরং পুরাে বিশ্বে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশরা ১৮১৯ সালে সিঙ্গাপুরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল খুলে দেওয়ার পর ইউরােপ ও এশিয়ার মধ্যে সমুদ্রবাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। ফলে সমুদ্রবন্দর হিসেবে সিঙ্গাপুর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব থাকা সত্ত্বেও সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ওপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।
দুবাই
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর বলা হয় দুবাইকে। ১৮ শতকে গড়ে ওঠা এই শহর বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পর্যটন এবং বিলাসকেন্দ্র হিসেবে এই শহর পরিচিত হতে। থাকে। মূলত বাণিজ্য কর, পর্যটন এবং বিমান পরিবহন থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয় এই শহরের। বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফা দুবাইয়ে অবস্থিত। ২০২১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দুবাইয়েই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য মেলা দুবাই এক্সপাে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন
- প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা
- আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ
- রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংস্কারক মিখাইল গর্বাচেভ
- রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ : বর্ণাঢ্য এক জীবনের আখ্যান
- জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পথপরিক্রমা
- মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১-২২
- চীন-তাইওয়ান সংকট
লন্ডন
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন বিশ্বের প্রধানতম অর্থ-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক শহর। কথিত আছে, রােমানরা ৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেন দ্বীপ আক্রমণের ৪ বছর পর ৪৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লন্ডনে জনবসতি গড়ে ওঠে। টেমস নদীর তীরে অবস্থিত শহরটি একসময় মহাপ্রতাপশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। লন্ডন বর্তমানেও পৃথিবীর অন্যতম সমুদ্রবন্দর ও শহর হিসেবে খ্যাত।
নিউইয়র্ক
নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিখ্যাত শহর। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এই শহর ১৬২৪ সালে ডাচদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তৎকালীন নাম ছিল নিউ আমস্টারডাম। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা ১৬৬৪ সালে এই অঞ্চল দখল করে নিলে এর নাম রাখা হয় নিউইয়র্ক। বিশ্ব অর্থবাজার এবং বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট নিউইয়র্ক শহরেরই অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র আর্থিক বাজারের এক রূপক শব্দই এই ওয়াল স্ট্রিট। বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়াল স্ট্রিটে অবস্থিত।
লস অ্যাঞ্জেলেস
যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। প্রথমে শহরটি স্পেনের অধীনে থাকলেও পরবর্তী সময়ে শহরটি মেক্সিকোর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৮৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো থেকে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য কিনে নিলে লস অ্যাঞ্জেলেস যুক্তরাষ্ট্রের অধিভুক্ত হয়। চলচ্চিত্র দুনিয়ার খ্যাতনামা স্থান হলিউডের জন্যও বিখ্যাত এই শহর। এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের অংশ লস অ্যাঞ্জেলেস যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনীতির অন্যতম প্রধান
শিকাগাে
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সর্ববৃহৎ শহর শিকাগাে। মিশিগান হ্রদের তীরে অবস্থিত এই শহর ১৮৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শহরটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে দেশটির পশ্চিম অংশে সম্প্রসারণের কাজ করছিল। ফলে শিকাগাে আদর্শগতভাবে এই সম্প্রসারণের দ্বারা তৈরি বাণিজ্য সম্ভাবনার সুবিধা গ্রহণ করে নিজেদের প্রসার ঘটায়। ফরচুন ৫০০-এর অন্তর্ভুক্ত ৩৬টি কোম্পানির হেডকোয়ার্টার এই শহরে অবস্থিত।